রাজশাহী পাসপোর্ট অফিসে হয়রান সেবাপ্রার্থীরা, ফাইলে ওড়ে টাকা
০১ সেপ্টেম্বর, ২০২২, 4:30 PM
০১ সেপ্টেম্বর, ২০২২, 4:30 PM
রাজশাহী পাসপোর্ট অফিসে হয়রান সেবাপ্রার্থীরা, ফাইলে ওড়ে টাকা
রাজশাহী কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক গোলাম রাব্বানী রায়হান। সম্প্রতি রাজশাহী পাসপোর্ট অফিসে তাঁর এবং পরিবারের সদস্যদের মিলে তিনটি পাসপোর্ট নবায়নের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু নানা ভুল ধরে সেই আবেদন বাতিল করা হয়। পরবর্তিতে আবারও আবেদন করার পরামর্শ দেওয়া হয় তাঁকে। তিনি সেটিও করেন। কিন্তু আবারও ভুল ধরে বাতিল করা হয় সে আবেদন। এভাবে হয়রানির শিকার হয়ে বাধ্য হয়ে শেষ পর্যন্ত গোলাম রাব্বানী নিজের ফেসবুকে তাঁর অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরে একটি পোস্ট করেন। তাতে তিনি লিখেন রাজশাহী পাসপোর্ট অফিসে সাহায্য করার মতো কেউ কি আছেন? পাসপোর্ট রি-নিউ নিয়ে বড়ই বিড়ম্বনায় আছি।’
এদিকে ওই শিক্ষকের পোস্টটি নজরে আসার পর গতকাল দিনভর রাজশাহী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে সরেজমিন অনুসন্ধান করেও সেবাপ্রার্থীদের হয়রানির চিত্র উঠে আসে।
গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার দুই দিন পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে দেখা যায়, জনা ত্রিশেক সেবাপ্রার্থী কেউ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন, কেউ বা ওয়েটিং কক্ষে চেয়ারে বসে আছেন। আবার কেউ পাসপোর্ট নেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন।
বিশ্রামকক্ষে বসে থাকা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সেবাপ্রার্থী বলেন, ‘আমি মালেয়শিয়া ছিলাম। সেখান থেকে বাসায় এসেছি। আমার পাসপোর্ট নবায়ন করতে হবে। আবেদন করেছি প্রায় এক মাস হলো। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে আমার পাসপোর্ট নানা সমস্যা আছে। এ কারণে আরও দেরি হবে। আবেদনের সময় এক আনসার সদস্যকে দুই হাজার টাকা দিয়েছি। তিনিই সবকাজ করে দেওয়ার কথা ছিল। এখন তিনি বলছেন আরও দেরি হবে। কাগজে ঝামেলা আছে। দেখি করা যায়।’
কথা হয় নূর হোসেন নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে। তিনি পাসপোর্ট নবায়ন করবেন। তার আগের পাসপোর্টে মোহাম্মদ পুরো লিখা আছে। কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্রে মো: লিখা আছে। এ কারণে আবেদন দুবার বাতিল করা হয়েছে। শেষ-মেষ বলা হয়েছে নোটারি পাবলিক করে সেই কপিসহ আবেদন নতুন করে জমা দিতে হবে। অথচ আগে মোহাম্মদ পুরোটায় লিখার নিয়ম ছিল আবেদনে।
নূর হোসেন বলেন, ‘একই সমস্যা আরও কয়েকজনের ছিল। কিন্তু তাদের আবেদন জমা নেওয়া হয়েছে। ওদের নিকট থেকে টাকা নিয়ে কাজ করে দিয়েছে। আমি টাকা দেয়নি তাই আবেদন জমা নেওয়া হচ্ছে না। আমাকে বার বার ঘুরানো হচ্ছে। এখন নোটারি পাবলিক করে নিয়ে এসে দেখি কি হয়।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী বলেন, ‘আমার আবেদনে মোসা: দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এটা নিয়ে ভুল ধরে আমাকে একের পর এক হয়রানি করা হয়েছে। পরে একজন দালালকে ২ হাজার টাকা দেওয়া হলে তখন আবার আবেদন জমা নেওয়া হয়েছে। এভাবে প্রতিটি ফাইলে ফাইলেই টাকা দিতে হয়। না হলে এখানে কোনো কাজ হয় না।
রাজশাহী কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক গোলাম রাব্বানী রায়হান অভিযোগ করে জানান, একেকবার একেক ভুল ধরে তাঁকে তিন তিনবার আবেদন করতে হয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই ভুল ধরে তাঁকে ঘুরে দেওয়া হয়েছে। শেষ পর্যন্ত একজন উর্দ্ধতন কর্মকর্তার সহায়তায় আমার আবেদনটি জমা নেওয়া হয়। পরে আমি পাসপোর্টটি হাতে পাই।’
এদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজশাহী পাসপোর্ট অফিসের সার্ট মূদ্রাক্ষরিক ওয়াদুত হোসেন, কর্মচারী আবু বক্কর ও আনসার সদস্য জাহাঙ্গীর মূলত বাণিজ্যের মূল হোতা। এই তিনজনের সঙ্গেই উপপরিচালক কামাল হোসেন ভালো সম্পর্ক। ফলে ওই তিন কর্মচারী পাসপোর্ট করে দেওয়ার নাম করে সেবাপ্রার্থীদের নিকট থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যেও উঠে এসেছে। বিশেষ করে আনসার সদস্যদের দিয়ে টাকার লেনদেনটা বেশি হচ্ছে বলেও একটি গোয়েন্দা তথ্যে উঠে এসেছে।
এসব বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে উপ-পরিচালক কামাল উদ্দিন খন্দকার বলেন, মানুষকে হয়রানির কোনো সুযোগ নাই। আমি নিজেও কাউন্টারে বসে প্রতিদিন পাসাপোর্ট জমা নেয়। কাউকে টাকা দিতে হয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করি। কেউ তো আমার কাছে অভিযোগ করে না। তাহলে এমন অভিযোগ আসে কোথায় থেকে। যারা অভিযোগ করেছেন, তারা আমার কাছে সরাসরি দেখা করে আবেদন জমা দিতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পাসপোর্ট জমা দিতে টাকা নেওয়া হচ্ছে এমন অভিযোগও সঠিক নয়। আমার অফিসে এই ধরনের কোনো কাজের সুযোগ নাই। আমি সবসময় মনিটরিং করছি। তার পরেও অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নিব।’