নাটোরে র্যাব-৫ এর অভিযানে গৃহবধুর সাত আঙ্গুল কর্তনের ঘটনায় প্রধান আসামী স্বামী'সহ সহযোগী গ্রেফতার
২৮ জুলাই, ২০২২, 4:35 PM
২৮ জুলাই, ২০২২, 4:35 PM
নাটোরে র্যাব-৫ এর অভিযানে গৃহবধুর সাত আঙ্গুল কর্তনের ঘটনায় প্রধান আসামী স্বামী'সহ সহযোগী গ্রেফতার
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই দেশের সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে সব ধরণের অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাব নিয়মিত জঙ্গী, সন্ত্রাসী, সংঘবদ্ধ অপরাধী, মাদক, অস্ত্রধারী অপরাধী, ভেজাল পণ্য, ছিনতাইকারী ধর্ষণসহ চাঞ্চল্যকর মামলার আসামীর বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে আসছে।
এরই ধারাবাহিকতায় অদ্য বুধবার (২৭ জুলাই, ২০২২ ইং) তারিখ বিকেল ০৪-টা ৩০ ঘটিকায় বিশেষ গোয়েন্দা তথ্যের
ভিত্তিতে নাটোর জেলার সদর থানাধীন হালসা ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামস্থ এলাকায় কোম্পানী অধিনায়ক, অতিঃ পুলিশ সুপার মোঃ ফরহাদ হোসেন এবং কোম্পানী উপ-অধিনায়ক, মোঃ রফিকুল ইসলাম এর নেতৃত্বে একটি অভিযান পরিচালনা করে, নাটোর জেলার সদর থানার মামলা নং- ৭৭, তারিখ ২৭/০৭/২০২২, ধারা- ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সংশোধনী-২০০৩) এর ১১ (খ), জিআর ৫৫০/২২ (নাটোর) এর এজাহার নামীয় পলাতক আসামী ১। মোঃ আব্দুল হাই (৪৫), পিতা- মৃত ফজলু মিয়া, ২। মোঃ রাব্বি মিয়া (২০), পিতা- মোঃ আব্দুল খালেক, উভয় সাং- বড় হরিশপুর, থানা- নাটোর, জেলা- নাটোরকে গ্রেফতার করা হয়।
ঘটনার বিবরণে প্রকাশ : প্রায় ১২ বছর পূর্বে অভিযুক্ত মোঃ আব্দুল হাই (৪৫) এর সাথে মোছাঃ মুক্তি খাতুন (৩০) এর বিয়ে হয়। এরপরে তাদের এক কন্যা সন্তান ও এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। বিয়ের পর হতে স্বামী মোঃ আব্দুল হাই যৌতুকসহ বিভিন্ন কারণে স্ত্রী মোছাঃ মুক্তি খাতুন (৩০) এর উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাত। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৪ জুলাই ২০২২ ইং তারিখ সময় অনুমান ১২ ঘটিকায় আসামী মোঃ আব্দুল হাই (৪৫) তরকারীতে তেল বেশি দেওয়ার কারণে তার মামাতো ভাই মোঃ রাব্বি মিয়া (২০) সহ অন্যান্যদের কুপরামর্শে ও ইন্ধনে তার স্ত্রী মোছাঃ মুক্তি খাতুন (৩০) কে হত্যার উদ্দেশ্যে হাসুয়া দিয়ে এলোপাথাড়ী ভাবে কোপাতে থাকে। ফলে মোছাঃ মুক্তি খাতুন এর দুই গালে ও বাম চোখের কোণায় হাসুয়ার কোপ লেগে রক্তাক্ত জখম হয়।
এসময় মোছাঃ মুক্তি খাতুন জীবন রক্ষার্থে স্বামী মোঃ আব্দুল হাই (৪৫) এর হাসুয়ার এলোপাথাড়ী আঘাত দুই হাত দিয়ে প্রতিহত করতে গেলে মুক্তি খাতুন এর বাম হাতের চারটি আঙ্গুল এবং ডান হাতের তিনটি আঙ্গুল কেটে গুরুতর জখম হয় এবং চামড়ার সাথে ঝুলে থাকে। পরবর্তীতে মুক্তি খাতুনের ডাক-চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে নাটোর সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে।
মুক্তি খাতুন এর শারীরিক অবস্থা গুরুতর হওয়ায় কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে দ্রুত রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে
রেফার্ড করেন। বর্তমানে মুক্তি খাতুন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। পরবর্তীতে মোছাঃ মুক্তি খাতুন (৩০) এর ভাই বাদী হয়ে আসামীদের বিরুদ্ধে নাটোর সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
এ বিষয়টি স্থানীয় লোকজনের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। এছাড়াও স্থানীয় ও জাতীয় ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় "তরকারীতে তেল বেশি দেওয়ায় স্ত্রীর দুই হাতের আঙ্গুল কর্তন" এই শিরোনামে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়।
এর প্রেক্ষিতে র্যাব উক্ত আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা তৎপরতা ও নজরদারী জোরদার করে। ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর আসামীগন এলাকা ছেড়ে পলায়ন এবং ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নেওয়ার পরিকল্পনা করে।
সর্বশেষ সিপিসি-২, নাটোর ক্যাম্পের একটি আভিযানিক দল বিশেষ গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নাটোর জেলার সদর থানাধীন হালসা ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামস্থ এলাকায় হতে ভিকটিমের স্বামী ১। মোঃ আব্দুল হাই (৪৫) ও সহযোগী ২। মোঃ রাব্বি মিয়া (২০) গ্রেফতার করতে সক্ষম হন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত স্বামী ১। মোঃ আব্দুল হাই (৪৫) ও সহযোগী ২। মোঃ রাব্বি মিয়া (২০) শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনসহ হাসুয়া দিয়ে এলোপাথাড়ী আঘাত করে জখম করার কথা স্বীকার করেছে। আটককৃত আসামীদেরকে নাটোর জেলার সদর থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলমান।
উল্লেখ্য, উপরোক্ত ঘটনায় র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এর বিরতিহীন চলমান অভিযানে নাটোরে র্যাব-৫ এর অভিযানে গৃহবধুর সাত আঙ্গুল কর্তনের ঘটনায় প্রধান আসামী স্বামী'সহ তার সহযোগীকে গ্রেফতারের বিষয়টি আজ বুধবার (২৭ জুলাই, ২০২২ ইং) সিপিসি-২ নাটোর, র্যাব-৫, কতৃক ই-মেইল যোগে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই গণমাধ্যম কর্মীকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
ইতোমধ্যেই র্যাবের পক্ষ থেকে অপরাধীদের কঠোর হুশিয়ারী দিয়ে জানানো হয় যে, দেশের সার্বিক শান্তি শৃঙ্খলা বজায়ের লক্ষ্যে অবৈধ অস্ত্র-মাদকদ্রব্য উদ্ধার থেকে শুরু করে সকল প্রকার অরাজকতাকে রুখে দিতে র্যাব বদ্ধপরিকর। এ ছাড়াও র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়নের জিরো টলারেন্স ঘোষণার পাশাপাশি অপরাধীদের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান গুলো চলমান রেখেছেন।