ধোপাজান নদীতে শ্রমিকের আহাজারি বালু ও পাথর বিক্রি করে চলে যাদের জীবন
১৮ জানুয়ারি, ২০২২, 6:05 PM
১৮ জানুয়ারি, ২০২২, 6:05 PM
ধোপাজান নদীতে শ্রমিকের আহাজারি বালু ও পাথর বিক্রি করে চলে যাদের জীবন
সুনামগঞ্জের ইজারা বিহীন ধোপাজান নদীতে প্রতিনিয়ত পাথর কুড়িয়ে চলছে হাজারো শ্রমিকের জীবন জীবিকা।বার বার প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা করা হলেও এসব নিষেধাজ্ঞা মানছেনা নদীর পাড়ে থাকা অসহায় দিনমজুর বারকি শ্রমিকেরা। তারা প্রতিনিয়ত প্রশাসনের চোখফাকিঁ দিয়ে ধোপাজানঁ নদীর তীরে পাথর কুড়িয়ে বালু ও পাথর ব্যবসায়ীদের কাছে ৪থেকে ৫শত টাকার পাথর বিক্রি করে জীবন জীবীকা নির্বাহ করে চলে শত শত বারকি শ্রমিকের পরিবার। আর এসমস্ত শ্রমিকদের কোন ভাবেই থামাতে পারছেনা পুলিশ প্রশাসন। বার বার অভিযান করে মামলা জরিমানা দিলেও জীবন জীবাকার তাগিতে শত শত শ্রমিকেরা প্রতিদিন হাতে করে পাথর কুড়িয়ে চলেছেন পাশাপাশি বারকি শ্রমিকেরা বেলচা দিয়ে ছোট ছোট বারকি নৌকা দিয়ে বালু উত্তোলণ করে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে চালাচ্ছেন তাদের অসহাত্ব জীবন।
অন্য দিকে ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে শ্রমিকদের কাছ থেকে এসমস্ত বালু ও পাথর অল্প অল্প করে কিনে নদীর পাড়ে ডামকিং করে রেখে পড়েন মহা বিপদে, ব্যবসাকে ঠিকিয়ে রাখতে তাদের উপর হয় মামলা অথবা জরিমানা। কি আর করা এক দিকে পুলিশের যৌথ অভিযানে মামলা/জরিমানা অন্য দিকে ক্ষুধার্ত শ্রমিকের আহাজারি এছড়াও সাংবাদিকদের কোচোঁনিতো আছেই? সব মিলিয়ে ধোপাজান নদী যেমন ইজারা দেওয়ার প্রয়োজন তেমনি পরিবেশ রক্ষা করাসহ শ্রমিকের জীবন জীবাকারও প্রয়োজন হয়ে দাড়িয়েছে? জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের দীর্ঘ অভিযানেএবং সাংবাদিকদের ধারাবাহিক প্রতিবেদনে ড্রেজার ও বোমা মেশিন দিয়ে ধুপাজান নদীতে বালু ও পাথর উত্তোলন বন্ধসহ বড় বড় বাল্কহেড নৌকা চলাচল বর্তমানে বন্ধ হলেও বারকি শ্রমিক ও পাথর শ্রমিকেরা মামলা হামলার তোয়াক্কা না করে জীবীকার তাগিতে চালিয়ে যাচ্ছেন বেলচা ও টুকরি দিয়ে বালু ও পাথর উত্তোলণ।
গত কয়েকদিন যাবত গনমাধ্যমে ধুপাজান চলতি নদীতে অবৈধ বালু ও পাথর উত্তোলনের একাদিক ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের নজরে আসলে বরাবরের মতোই জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কঠোর নির্দেশে অবৈধ বালু ও পাথর উত্তোলন বন্ধে ধুপাজান চলতি নদীতে পুলিশের অভিযান পরিচালনা শুরু করাসহ পুলিশের পক্ষ থেকে একটি অস্থায়ী পুলিশ ফারি কেম্প করা হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে শতাধিক বারকি শ্রমিক ও পাথর শ্রমিকদের সাথে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে আলাপ করতে চাইলে তারা বলেন কি করবেন? নিউজ করবেন করেন গিয়া? আপনারা সাংবাদিকরা শুধু নিউজ করতে জানেন কিন্তু আমাদের মতো অসহায় শ্রমিকদের এক বেলা ঘরে খাবার দিতে পারেননা ? তাহলেতো আমরা পাথর কুড়াতে আর বালু কুড়াতে আইতাম না? কান্না জড়িত কন্ঠে কয়েক জন মহিলা শ্রমিক বলেন দেশে করোনা আমরা গরীব মানুষ বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে না খাইয়া মরতামনি? পুলিশে বিজিবি দৌড়ায় জীবন বাচাতেঁ আমরা হাত দিয়ে সারাদিন পাথর কুড়িয়ে ৪থেকে ৫শতটাকার পাথর ও বালু বিক্রি করি ব্যবসায়ীদের কাছে। সেই টাকা দিয়ে আমাদের পরিবার চলে? এছাড়াও শ্রমিকেরা আরও বলেন-- মামলা কাইলে কাইব ব্যবসায়ীরা আমরার কিতা, আমরা দিন আনি দিন খাই আপনারা সাংবাদিকরা লিখেন গিয়া। তারা আরও বলেন পুলিশরে খইবেন আমাদের ঘরে খাবার দিতে তাহলে আমরা আর নদীতে যাইতামনা?
কয়েকজন বালু ও পাথর ব্যবসায়ীর কাছে জানতে চাইলে একাধীক বালু ও পাথর ব্যবসায়রা বলেন ধোপাজান নদী ইজারা না থাকায় আমরা ব্যবসায়ীরা আমাদের ব্যবসাকে ঠিকিয়ে রাখতে বারকি শ্রমিকদের ও দিনমজুর পাথর শ্রমিকদের কাছ থেকে টাকা দিয়ে বালু ও পাথর কিনে স্টক করে রাখি । কিন্তু প্রশাসন যখন খবর পান এবং এক জায়গায় বালু ও পাথর দেখেন আমাদের উপর মামলা অথবা অর্থদন্ড করেন। কি আর করব পরিবারের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার জন্য আমরা হই অবৈধ বালু ও পাথর উত্তোলণকারী।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন বালু ও পাথর ব্যবসা আমাদের এক মাত্র অবলম্বন। এখানে হাজার হাজার শ্রমিকদের জীবীকার এক মাত্র কর্মস্থল এই ধোপাজান নদী। কিন্তু সরকারের তরফ থেকে বালু ও পাথর উত্তোলনের নিষেধাজ্ঞা থাকার কারনে নদীটি এখন ইজারা বিহীন অবস্থায় রয়েছে। তাই দিন মজুর শ্রমিকদের কাছ থেকে বালু ও পাথর কিনে রাখি প্রশাসন আমাদের কিনা বালু ও পাথর আটক করে নিলামে বিক্রি করে সরকারী কোষাগারে নিয়ে যান। এসময় কোন কোন ব্যবসায়ীরা নিলামের মাল আবার কিনে ছোট ছোট নৌকা যৌগে বের করে নিয়ে যান। নদীর পাড়ে থাকা শ্রমিকদের দাবী প্রশাসন ধোপাজান নদী ইজারা দেন বা নাই দেন পরিবেশ রক্ষা করে বারকি শ্রমিক ও পাথর শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেবেন এমনটি প্রত্যাশা তাদের।