দেশের মানুষের ধারণা সাইকেল স্টান্টাররা উচ্ছৃঙ্খল
১২ জুলাই, ২০২২, 8:13 PM
১২ জুলাই, ২০২২, 8:13 PM
দেশের মানুষের ধারণা সাইকেল স্টান্টাররা উচ্ছৃঙ্খল
ইউটিউবে সাইকেল স্টান্টের ভিডিও দেখে অনুপ্রাণিত হই। ইচ্ছা হয় আমিও এভাবে সাইকেল চালানো আয়ত্ত করবো। এরপর স্টান্ট করার জন্য বাবার কাছ থেকে সাইকেল কিনে নিই। প্রথমে স্বাভাবিকভাবে সাইক্লিং করি। ধীরে ধীরে স্টান্ট প্র্যাকটিস করি। ঝুঁকিপূর্ণ বলে মা নিষেধ করলেও আমি থেমে থাকিনি।’ কথাগুলো বলছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহরিয়া নাফি।
বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় বিষয় সাইকেল স্টান্ট। উন্নত বিশ্বে সাইকেল এর সূচনা অনেক আগে হলেও বাংলাদেশে বিগত কয়েক বছরে জনপ্রিয়তা বেড়েছে। সাইকেল স্টান্ট মূলত সাইকেল নিয়ে বিভিন্ন কসরত দেখানো। উত্তরাঞ্চলের জেলা রাজশাহীতে তরুণ-কিশোরদের কাছে এটি বর্তমানে অত্যন্ত জনপ্রিয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের মোহনপুর ফ্লাই ওভারের ওপর বিভিন্ন বয়সের একদল শিক্ষার্থীকে সাইকেল স্টান্ট করতে দেখা গেছে। স্টান্ট করতে আসা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকার। তারা প্রায়ই এখানে বাইসাইকেল স্টান্ট করতে আসেন বলে জানান।
‘দেশের মানুষের ধারণা সাইকেল স্টান্টাররা উচ্ছৃঙ্খল’
দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. বিজয় জাগো নিউজকে বলেন, অন্য কোনো খেলা ভালো পারতাম না বলেই সাইকেল চালাতাম। সাইকেল স্টান্ট করতে গেলে হাত-পা ভেঙে যাবে বলে বাসা থেকে নিষেধ করে। তারপরও লুকিয়ে লুকিয়ে সাইকেল স্টান্ট শিখতাম। প্রথমে আমরা চারজন শুরু করি, এখন প্রতিদিন একসঙ্গে ১৬ জন অনুশীলন করি। সাইকেল স্টান্টে প্রচুর ঝুঁকি রয়েছে জানা স্বত্বেও খেলাটি শিখেছি।
এ বিষয়ে সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিজয় জানায়, আমরা স্টান্ট করার ক্ষেত্রে সরকারি বেসরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা পাই না। যদি সুযোগ সুবিধা পাওয়া যেত তাহলে স্টান্টের মাধ্যমে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে আরও ভালোভাবে উপস্থাপন সম্ভব হতো। আমরা চাই বাংলাদেশ সরকার যাতে স্টান্ট করার জন্য জায়গার ব্যবস্থা করে দেয়।
সাইকেল স্টান্টারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাইকেল স্টান্টের মধ্যে তিন ধরনের খেলা তারা পারেন। এরমধ্যে হুইলি স্টান্ট যেটি পেছনের চাকা মাটিতে থাকবে এবং সামনের চাকা ওপরে। এক্ষেত্রে স্টান্টার পেছনের চাকায় ভর করে সাইকেল চালিয়ে যাবে। জনপ্রিয় আরেকটি খেলা হচ্ছে সার্ফিং স্টান্ট। সার্ফিং হলো দুই হাত ছেড়ে চলন্ত সাইকেলের ওপর দাঁড়ানো। সবশেষ সুইচব্যাক স্টান্ট যা সাইকেলের পেছনের ভাগে বসে সাইকেল চালানো যা অত্যন্ত ভীতিকর। এই তিন ধরনের স্টান্ট করতে পারেন এখানে আসা রাইডাররা।
এছাড়া রোলিং, স্টপিং, নিকন্যাক রোলিং, সুইচব্যাক সার্ফিং, সেমি চেয়ার হুইলি, ফ্লাইং মিঙ্গেসহ কয়েকটি স্টান্ট শিখছেন তারা।
তারা সকালের সময়কে নিউজকে জানান, বিপজ্জনক গতিতে তারা সাইকেল স্টান্ট করতে গেলে অনেক সময় বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। এজন্য সেফটি গার্ডের জন্য বিভিন্ন সরঞ্জামাদি ব্যবহার করেন তারা। সেফটি গার্ডের মধ্যে অন্যতম হেলমেট, গ্লভবস, জুতা, নিগার্ডসহ আরও অনেক সরঞ্জামাদি। এ বিপজ্জনক খেলা শিখতে গিয়ে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে তাদের।
তারা জানান সাইকেল স্টান্ট বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তায় থাকলেও বাংলাদেশের মানুষ স্টান্ট করাকে এখনো ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারেনি। সাধারণ মানুষের ধারণা, স্টান্টারদের মধ্যে অনেক তরুণই উচ্ছৃঙ্খল। ব্যস্ত রাস্তার মধ্যে বিপজ্জনক গতিতে তারা সাইকেল স্টান্ট করে এবং সব স্টান্টারই একই স্বভাবের। যদিও ইদানিং বাংলাদেশে তরুণদের থেকেও শিশু-কিশোরদের মধ্যে সাইকেল স্টান্ট করার আগ্রহ বেশি লক্ষণীয়।
‘দেশের মানুষের ধারণা সাইকেল স্টান্টাররা উচ্ছৃঙ্খল’
শাহরিয়া নাফি জানায়, সাইকেল স্টান্ট শুরুর দিকে কঠিন মনে হলেও অনেক অনুশীলনের মাধ্যমে এই পর্যায়ে আসা। এখন নিয়মিত স্টান্ট করি। এটা একটা শখে পরিণত হয়ে গেছে। এখন কোনোভাবেই এটা ছাড়া সম্ভব না। আর এটা বাদে অন্য কোনো খেলাধুলাও করি না। প্রতিদিন প্রায় ৩-৪ ঘণ্টা সময় দিই স্টান্ট শেখার জন্য।
‘এখন আমার স্বপ্ন, আমি একদিন বাংলাদেশের একজন বড় স্টান্ট রাইডার হবো এবং পরিচিত আগ্রহীদের নিয়ে একটা ক্লাব প্রতিষ্ঠা করবো।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী হাসিবুল ইসলাম সকালের সময়কে নিউজকে বলেন, ভাইদেরকে দেখে আমারও সাইকেল স্টান্ট করতে ইচ্ছা হয়। আমাদের এলাকার আশেপাশে স্টান্ট করার জন্য তেমন জায়গা নেই। ফাঁকা রাস্তার সন্ধান পেলেই আমরা যেকোনো জায়গায় স্টান্ট করতে চলে যাই। এতে বাজে নেশা ও বাজে আড্ডা থেকে দূরে থাকতে পারি আমরা। অনেক দেশে স্টান্ট রাইডিং নিয়ে বিভিন্ন ইভেন্টের আয়োজন করা হয় কিন্তু বাংলাদেশে সেই সুযোগ সুবিধা নেই।