ঢাকা ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম
বসুন্ধরা ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড স্কিল ডেভেলপমেন্ট সেন্টারে প্রশিক্ষণ, সনদ পেলেন ৪০ জন বড়দিনের আনন্দে সম্প্রীতির জয়গান বড়দিনের আনন্দে সম্প্রীতির জয়গান সিএফমোটো বাংলাদেশে অফিসিয়ালি লঞ্চ করল তাদের ফ্ল্যাগশিপ ৩০০ সিসি’র স্পোর্টস বাইক সিএফমোটো বাংলাদেশে অফিসিয়ালি লঞ্চ করল তাদের ফ্ল্যাগশিপ ৩০০ সিসি’র স্পোর্টস বাইক সিএফমোটো বাংলাদেশে অফিসিয়ালি লঞ্চ করল তাদের ফ্ল্যাগশিপ ৩০০ সিসি’র স্পোর্টস বাইক ভাইব্রেন্ট এখন উত্তরায় ফ্রেইট ফরওয়ার্ডিং খাতে চ্যালেঞ্জ ও সমাধান – বাফা প্রেসিডেন্ট প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের মালিক প্রতিষ্ঠান ট্রান্সকম গ্রুপের ৩০ হাজার কোটি টাকা একার দখলে নিয়েছেন সিমিন রহমান বিসিকে বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা

তানোরে কমিটি গঠনের এক ভুলেই সব শেষ ভেঙে পড়েছে!

#

১৪ নভেম্বর, ২০২১,  10:19 AM

news image



রাজশাহী বিএনপির শক্তিশালী দুর্গ। বিএনপিকে আরও বেগবান করতে কেন্দ্র থেকে দীর্ঘদিনের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতৃত্ব সরিয়ে দিয়ে নতুন কমিটি গঠন করা হয়। শেষ পর্যন্ত ওই একটি ভুল সিদ্ধান্তই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। শক্তি সঞ্চয় তো দূরের কথা, শক্তি ক্ষয় হতে হতে এখন প্রায় শক্তিহীন দলে পরিণত হয়েছে। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কমিটি গঠনের নীতিহীন টাকার খেলা। নিজের প্রভাববলয় তৈরি করতে বেছে বেছে অযোগ্যদের হাতে বিভিন্ন কমিটির নেতৃত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে। এতে ক্ষোভ-হতাশার পাশাপাশি বিশৃঙ্খল দলে পরিণত হয়েছে বিএনপি। সাহসীরা সাহস হারাচ্ছেন। ত্যাগ করতে করতে অনেকে ক্ষোভে-দুঃখে একেবারে দলই ত্যাগ করেছেন।


এর ফলে রাজশাহীতে বিএনপি বহুধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। সমাধান হিসাবে সংগঠনকে বারবার কেন্দ্র থেকে ভেঙে নতুন কমিটি করা হয়। একধরনের পলিটিক্যাল এক্সপেরিমেন্ট চালানো হয় এখানে। তবুও সচল হয়নি জেলা বিএনপির কার্যক্রম। নতুন নেতৃত্ব আসার পরও মহানগর বিএনপিতে গতি আসেনি। কাটেনি তৃণমূল নেতাকর্মীদের হতাশা। জেলা কিংবা মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কারও সঙ্গে কারও তেমন সদ্ভাব নেই। সংগঠনে নেই কোনো চেইন অব কমান্ড। তৃণমূল নেতাকর্মীদের অবস্থা ঠিক এতিমের মতো। বারবার কমিটি ভেঙে অযোগ্যদের কাঁধে সংগঠনকে চাপিয়ে দেওয়ার ফল ভোগ করছেন সাধারণ নেতাকর্মীরা। দলের নেতাকর্মীরা অবশ্য সংগঠনের এই দুরবস্থার পেছনে কেন্দ্রের কতিপয় নেতার কমিটি বাণিজ্য, অদূরদর্শিতা ও বহুমাত্রিক কোন্দলকেই দায়ী করছেন।



এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি এবং বর্তমানে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু রবিবার সকালের সময়কে বলেন, ‘সংগঠনের বিরুদ্ধে কথা বলা কখনো শিখিনি। যেহেতু এই শিক্ষা নিইনি, তাই দলের বিরুদ্ধে কিছু বলতে চাই না। শুধু এতটুকু বলতে পারি, সন্তান ভুল করলে অভিভাবক কখনো সন্তানকে ফেলে যান না। আমার শিরা-উপশিরায় বিএনপির আদর্শ প্রবাহিত। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যত বাধা আসুক না কেন, আমি আমার প্রিয় দলের আদর্শ থেকে কখনো বিচ্যুত হতে পারি না। আমি চাই, ভুলের ঊর্ধ্বে কেউ নন। কিন্তু দল সবার আগে। তাই ত্যাগী নেতাকর্মীদের বলব, সবাই যেন মান-অভিমান ভুলে সব সময় ঐক্যবদ্ধ থাকে। মনে রাখতে হবে, কর্মীরাই সব সময় নেতাদের বাঁচিয়ে রাখেন। কর্মীরাই নেতা বানান। সময় যখন আসবে, ত্যাগী কর্মীরা তার যোগ্য আসন নিশ্চয় ফিরে পাবে।


দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৬ সালের ২৭ ডিসেম্বর জেলা বিএনপির সভাপতি নাদিম মোস্তফা ও রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমান মিনুকে বাদ দিয়ে দুটি নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয় কেন্দ্র থেকে। মহানগর কমিটির সভাপতি করা হয় নগর যুবদলের সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে এবং সাধারণ সম্পাদক হন শফিকুল হক মিলন। অন্যদিকে তোফাজ্জল হোসেন তপুকে সভাপতি ও মতিউর রহমান মন্টুকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা বিএনপির নতুন কমিটিও হয় একই দিনে। ওই সময় এই দুই কমিটির বিরুদ্ধেই ব্যাপক ক্ষোভ বিক্ষোভ দেখান নেতাকর্মীদের একটি বড় অংশ। তারা মহানগর সভাপতি পদ থেকে মিনু ও জেলা সভাপতির পদ থেকে নাদিমকে সরানোর বিষয়টি কোনোভাবেই মানতে পারেননি। ফলে বিএনপি অফিসে তালা, পাল্টা তালা মারার ঘটনা চলে মাসাধিককাল ধরে। এহেন পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী রাজশাহীতে গেলে গরম তেলে ঘি ঢালার অবস্থা হয়। তার মাথায় পচা ডিম ছুড়ে মারেন ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা।


প্রসঙ্গত, এর আগে ২০০৯ সালে মিজানুর রহমান মিনুকে সভাপতি ও শফিকুল হক মিলনকে সাধারণ সম্পাদক করে বিএনপির কমিটি হয় সম্মেলনের মাধ্যমে। একইভাবে নাদিম মোস্তফাকে সভাপতি ও প্রয়াত অ্যাডভোকেট কামরুল মুনীরকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা কমিটি গঠন করা হয়। সাধারণ নেতাকর্মীদের মতে, এই দুটি কমিটির নেতৃত্বে রাজশাহী জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ এবং শক্তিশালী ছিলেন। কিন্তু ২০১৪ সালে সরকারবিরোধী আন্দোলনে মিনু-নাদিম যথেষ্ট পারদর্শিতা দেখাতে পারেননি, এমন অজুহাতে তুলে ২০১৬ সালে শীর্ষ দুই পদ থেকে তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়। বিএনপির অনেক নেতাকর্মী মনে করেন, মিনু-নাদিমকে মাইনাস করার ফলে রাজশাহী বিএনপিতে শৃঙ্খলা ও ঐক্য পুরোপুরি ভেঙে পড়ে, যা আজও বহাল আছে। ঐতিহাসিক এই ভুল সিদ্ধান্তের কারণে দলের নেতাকর্মীরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বিপদ-আপদে তারা হয়েছেন আশ্রয়হীন।


অন্যদিকে বুলবুল-মিলনের নেতৃত্বে গত কয়েক বছরেও মহানগরে বিএনপি ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনি। দলের শক্তিও বাড়েনি। বরং দল ছেড়ে গেছেন অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা। অতি সম্প্রতি নগরীর শাহমখদুম থানা বিএনপির সভাপতি মনিরুজ্জামান শরীফ পদ ও দল ছেড়েছেন। নেতাকর্মীদের মতে, মনিরুজ্জামান শরীফ একজন ত্যাগী নেতা। এতো বছর বিএনপি করার পর দল ছাড়া প্রসঙ্গে শরীফ যুগান্তরকে বলেন, ‘রাজশাহী মহানগর বিএনপিতে চেইন অব কমান্ড ও দলীয় শৃঙ্খলা অনেক আগেই ভেঙে পড়েছে।’ নগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘সংগঠনে বিভেদ সৃষ্টি করে দলকে দুর্বল করা কোনো নেতার কাজ নয়। অথচ যা আমাদের একজন শীর্ষ নেতা করছেন। আমি মৌখিকভাবে প্রতিবাদ করেও ফল পাইনি। ফলে পদ ও দল ছেড়ে দেওয়াকে ঠিক মনে করেছি।’


এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই রাজশাহী সিটি নির্বাচনের আগেই বিএনপির ১৫ কাউন্সিলর দল ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড বিএনপির কয়েক হাজার নেতাকর্মী দল ছেড়ে আওয়ামী লীগে চলে যান। যারা নিজ নিজ এলাকায় বিএনপির ভালো সংগঠক ছিলেন। এরপর থেকেই নগরীর থানা পর্যায়ে সংগঠন ক্রমশ দুর্বল হতে শুরু করে দল। দলত্যাগী ওয়ার্ডের একজন সাবেক সভাপতি নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে বলেন, ‘বুলবুলকে নগর বিএনপির সভাপতি করার পর থেকেই রাজশাহীতে দলের ক্ষয় শুরু হয়। এই ধারা এখনো অব্যাহত।’ চাপা ক্ষোভ প্রকাশ করে এই নেতা আরও বলেন, ‘মিজানুর রহমান মিনু একজন কিংবদন্তি নেতা। বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অপছন্দের নেতা মিনুকে সরিয়ে তার বলয়ের নেতাদের রাজশাহী বিএনপির দায়িত্বে বসান। কয়েকবারই এমন করা হয়েছে।

logo

সম্পাদক ও প্রকাশক : তানভীর সানি