ঝিকরগাছায় আদালতের রায় ও ডিক্রিকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে চলছে লিলাখেলা : ২০লক্ষ টাকার মাছ লুটপাট
০৪ জুন, ২০২২, 5:21 PM
০৪ জুন, ২০২২, 5:21 PM
ঝিকরগাছায় আদালতের রায় ও ডিক্রিকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে চলছে লিলাখেলা : ২০লক্ষ টাকার মাছ লুটপাট
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার ৩নং শিমুলিয়া ইউনিয়নের একটি ব্যক্তিগত জমির বিষয়ে আদালতের রায় ও ডিক্রিকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে চলছে লিলাখেলা। আর এই লিলাখেলার শিকার হয়ে বর্তমানে উক্ত জমি থেকে ২০লক্ষ টাকার মাছ লুটপাট হওয়ার অভিযোগ তুলে ৩নং শিমুলিয়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্য (মেম্বার) মোঃ মাহাবুর রহমান সহ আরো সহযোগীকে চিহ্নিত করে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে বিভিন্ন সময়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন জমির মালিক সোহরাব হোসেনের ছেলে মোঃ শহিদুল ইসলাম পল্লব। আদালত থেকে রায় ও ডিক্রি পাওয়া ব্যক্তিমালিকানা জমির বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন বলছে জমিটি বর্তমানে হাড়িয়া যুব উন্নয়ন বহুমুখি সমবায় সমিতি লিঃ কে ইজারা দেওয়া হচ্ছে। উপজেলা সমবায় কার্যালয়ের উপজেলা সমবায় অফিসার কর্তৃক নিবন্ধিত হাড়িয়া যুব উন্নয়ন বহুমুখি সমবায় সমিতি লিঃ। সমবায় অফিসার কর্তৃক অডিট রিপোর্টে হাড়িয়া যুব উন্নয়ন বহুমুখি সমবায় সমিতি লিঃ এর নিকট শিমুলিয়া ইউনিয়নের উত্তর রাজাপুর গ্রামের কোন জমি ইজারা হয়নি। তবে ৩নং শিমুলিয়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য (মেম্বার) মোঃ মাহাবুর রহমান উক্ত ব্যক্তিমালিকানা জমি থেকে ২০লক্ষ টাকার মাছ লুটপাট করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে এবং বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ পড়েছে। সম্প্রতি ০৮/০৫/২০২২ইং তারিখে পরিবারের সকল সদস্যের মৃত্যু দিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে লিখিত আবেদন দাখিল করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকের পক্ষে রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর ০৫.৪৪.৪১০০.০০৫.১৫.০০১.২২-৭৫৩নং স্মারকে শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য মোঃ মাহাবুর রহমান ও তার সহযোগীদের দ্বারা মোঃ শহিদুল ইসলাম পল্লব এর উপর নির্যাতন, নিপীড়নসহ অন্যায় ভাবে তার দখলীয় পুকুরের প্রায় ২০লক্ষ টাকার মাছ লুট করার অভিযোগের বিষয়ে ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে সরেজমিনে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানিয়েছেন।
তথ্য অনুসন্ধ্যানে দেখা যায়, মৃত আঃ আজিজ বিশ্বাসের ছেলে সোহরাব হোসেন ও মেয়ে খায়রুন নাহার ৩নং শিমুলিয়া ইউনিয়নের ১৭নং উত্তর রাজাপুর মৌজায় ১০১৭নং এসএ দাগে মোট ১৮.২৫একর জমির মধ্যে বাস্ত ভিটা সংলগ্নে ৭.৮০একর জমির মালিক। তাহারা বাদি হয়ে বিজ্ঞ আদালতে দেওয়ানী মোকদ্দমা নং ১৭/২০১২ এ একটি মামলা করেন। মামলার উপর বিজ্ঞ আদালত ১৫/০৪/২০১৩ তারিখে বাদিদের অনুকূলে ৭.৮০একর জমির প্রাথমিক ডিক্রী, ১৯/০৪/২০১৬ বিজ্ঞ আদলতের নিয়োগকৃত কমিশনের মাধ্যমে সরজমিনে বাদিদ্বয়ের জমির সঠিক পরিমাপ করে লাল ফ্লাগ উত্তোলন করে দখল বুঝিয়ে দেন। পরবর্তীতে বাদিদেরই পক্ষে যশোরের যুগ্ম জেলা জজ ১ম আদালত ১০/১১/২০২০ চুড়ান্ত ডিক্রীর আদেশ দেন। কিন্তু একটি পক্ষ আদালতের রায় ও ডিক্রিকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে ইজারা দেওয়ার নামে চলছে লুটপাটের কার্যক্রম। বর্তমানে উক্ত জমির বিষয়ে বিজ্ঞ জেলা জজ আদালতে মিস আপীল ২৪/২০২১ নিষেধাজ্ঞার মামলা চলমান রয়েছে। তারিখ-১৯/১০/২০২১। নিষেধাজ্ঞা মামলায় বিবাদীদ্বয়ের প্রতি ৭দিনের মধ্যে ১-৫নং রেসপনডেন্ট পক্ষের প্রতি কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেন বিজ্ঞ জেলা জজ আদালত। তারপরও ক্ষমতার অপব্যবহার করে বাদীদের পথে বসিয়ে দিয়েছে বিবাদী পক্ষদ্বয়। উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক বর্তমানে বলা হচ্ছে উক্ত জমিটি হাড়িয়া যুব উন্নয়ন বহুমুখি সমবায় সমিতি লিঃ কে ইজারা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু হাড়িয়া যুব উন্নয়ন বহুমুখি সমবায় সমিতি লিঃ কোন সদস্য উক্ত জমিতে যাচ্ছে না। সেখানে শিমুলিয়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য (মেম্বার) মোঃ মাহবুর রহমানকে ক্ষমতা প্রয়োগ করতে দেখা গেছে। ইউপি সদস্য বাদিদ্বয়ের জমি থেকে ২০লক্ষ টাকার মাছ লুটপাট করেও ক্ষ্যান্ত হয়নি বরং পুকুর পাড়ে থাকা নারিকেল গাছ সহ অন্যান্য ফলের গাছ কর্তন, পুকুরের পাড় ভাঙ্গা, পাটা, বাঁশ, নেট সরিয়ে প্রতিনিয়ত বড় ধরনের ক্ষতি সাধন করছে। তাদের পুকুরে থাকা ২০লক্ষ টাকার মাছ ফিরে পেতে বিভিন্ন সময় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়, থানার অফিসার ইনচার্জ বরাবর একধিক বার লিখিত অভিযোগ দায়ের করেও কোন প্রকার মিমাংসা বা বিচার না পেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও বিভাগীয় কমিশনার বরাবর আবেদন দাখিল করেছেন বলে জানান মোঃ শহিদুল ইসলাম পল্লব।
৩নং শিমুলিয়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য (মেম্বার) মোঃ মাহাবুর রহমান বলেন, আমরা যতক্ষন পর্যন্ত ডাক না পায় ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা ওইসব জায়গাই নামতিও পারিনে। করোনার জন্য টেন্ডারটা হয়নি। গতবার ২৮সালে দিয়েছে ৩০সাল পর্যন্ত মেয়াদ। হঠাৎ করে যখন সার্কুলার দেলে। করোনা ছিল, এই শিডিউলটা কোনো মতে অফিস আদালত বন্ধ। তখন যদি আমরা শিডিউল না পায়, চিঠি না ইস্যু করে তাহলে তো আমরা খাজনার টাকা দিতেও পারিনে। আর ৩০ শে চৈত্র পর্যন্ত আমাদের মেয়াদ থাকে। ৩০ শে চৈত্রের মধ্যে আমাদের টাকা দেওয়াই লাগে। ৩০ শে চৈত্রের মধ্যে টাকা দুবা না, ৩০ শে চৈত্র এসে যাবে তখন কিন্তু জায়গা আমার থাকবে না। মানে সমিতির লোকের থাকবে না। ৩০ শে চৈত্র আসলেই টাকা জমা দিতিই হবে। তখন সেবার যখন কিন্তু আমরা যখন সরকার উজ্জুক করে দিলে এবার আমরা সেই শিডিউল সব জমা দিলাম কাগজপত্র নিয়ে। এবার হঠাৎ করে দিতে দিতে অনেক দিন দেরি হয়ে গেল। এসময় তার নিকট উক্ত জমি ইজারা নেওয়ার বিষয়য়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি একবারই নিছি। কারণ হিসেবে তিনি উপজেলার দুজন বড় নেতার নাম করেন। তিনি আরো বলেন, ওই জমি আমার আগে কামাল চাষ করতো। পরে আমি কামালের নিকট থেকে স্ট্যাম্প করে নিয়ে চাষ করছি। হাড়িয়া সমিতির ওরা কামালকে স্ট্যাম করে দিয়েছে আর কামাল আমাকে স্ট্যাম্প করে দিয়েছে। আমরা সমিতি ওয়ালাদের একটা বেনিফিট দিয়ে দি। হাড়িয়া যুব উন্নয়ন বহুমুখি সমবায় সমিতি লিঃ উক্ত জমির ইজারা নিচ্ছে সেখানে মাহাবুর রহমান কি করছে এটার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, যখন কামাল ঐ জমিতে ছিল, ঠিক সেই সময় কামালকে কে যেন বলেছিল। তাই কামাল স্ট্যাম্প করে নেয়। আসলে আমাদের তো সমিতিওয়ালাদের একটা বেনিফিট দিতে হয়। এসময় তাকে সমিতির বিষয়ে অবগত করে জানতে চাওয়া হয় যদি সমিতি ওয়ালার বলে তারা ইজারা নেয়নি।